জাগো ডেস্কঃ গার্মেন্টস কারখানাগুলো খোলার সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের ঢাকায় ছুটে আসার সেই অভাবনীয় দৃশ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন গার্মেন্টস কারখানা চালু করার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ায় লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক চাপের কারণে সীমিত পরিসরে শিল্প কারখানা বা ব্যবসা চালু করার কথা বলা হলেও তা সীমিত রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, লকডাউন ভেঙে পড়ায় হাজার হাজার মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করাও সম্ভব হয়নি বলে তারা মনে করেন। তাহলে বাংলাদেশের জন্য এখন উপায় কী আছে বা কোন পথ খোলা আছে-এসব প্রশ্ন এখন আলোচনায় আসছে।
সীমিত পরিসরের বিষয়টি কথাতেই রয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো, গার্মেন্টস মালিকরা প্রায় সবাই তাদের কারখানা চালু করেছেন। কারখানাগুলো খোলার সময় দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার শ্রমিকের ঢাকায় ছুটে আসার সেই অভাবনীয় দৃশ্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন অনেক কারখানায় শ্রমিকের করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির প্রশ্ন উঠেছে।
কিন্তু গার্মেন্টস খোলার মধ্যেই সরকারের চিন্তা সীমাবদ্ধ থাকেনি। একের পর এক শিল্পকারখানা এবং দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে দ্রুততার সাথে নানামুখী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।
সরকারি গবেষণা সংস্থা বিআইডিএস এর সিনিয়র গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেছেন, এখন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা ছাড়া বিকল্প নেই। তবে তাড়াহুড়ো না করে পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি মনে করেন। এখন কোন অবস্থাতেই জীবন আর জীবিকাকে আলাদা করে দেখার উপায় নাই। আমি যদি বলি শুধু জীবন রক্ষা করবো, কি করে করবো-কোটি কোটি মানুষ, এত মানুষের খাবারের সংস্থান আমি কি করে করবো?সুতরাং সেই জায়গাটাতে চিন্তা করলে আমাকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যেতে হবে। কিন্তু সেখানেই পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল বলে গবেষক নাজনীন আহমেদ মনে করেন।
লকডাউন অবস্থা থেকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কতটা যাবো,সেটা নির্ভর করবে আমি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করার ফলে বাড়তি যে স্বাস্থ্যঝুঁকিটা তৈরি হলো বা সহজ কথায় বললে বাড়তি যে করোনা রোগী আসার সম্ভাবনা তৈরি হলো, সেটা সামাল দেয়ার মতো স্বাস্থ্য সুবিধা আমার আছে কি না-এটা দৃষ্টিভঙ্গি হওয়ার দরকার ছিল।
তিনি আরও বলেছেন, মুশকিলটা হচ্ছে, দেড়মাস পর এখন যে গতিতে আমরা সবকিছু খুলে দিতে চাচ্ছি, সেই অবস্থায় কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সামাল দেয়ার ক্ষমতা আমরা বাড়াইনি।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য লম্বা সময় লকডাউনের কারণে বাংলাদেশে অনেকেকেই কাজ হারিয়েছেন।
চাপের কারণেই কি ঢিলেঢালা লকডাউন? প্রায় দেড় মাস ধরে লকডাউনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিক-কর্মচারীসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবিকার তাগিদ একটা চাপ তৈরি করছিল। এছাড়া গার্মেন্টস মালিকসহ বিভিন্ন মহলের চাপ সরকারের বিবেচনার বড় বিষয় ছিল।
যানবাহন আর মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর রাস্তাগুলোও আগের সেই ব্যস্ত অবস্থায় ফিরতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সাইন্সের শিক্ষক নাদিরা পারভিন মনে করেন, আরও সময় নেয়ার সুযোগ থাকলেও তার আগেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখন দিন দিন সংক্রমণ যখন বাড়ছে, তখন আরেকটু সময় নেয়া উচিত ছিল। এখনই সময় হয়নি সবকিছু খুলে দেয়ার।
লকডাউন বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিথিল করা ছাড়া সরকারের বিকল্প ছিল না। বাণিজ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীদের অনেকে এমন বক্তব্যই দিয়েছেন। কিন্তু মানুষকে ঘরে রেখে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর অন্যতম উপায় হিসাবে দেখা হয় লকডাউন পদ্ধতিকে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির উপদেষ্টা অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, যেহেতু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করা হয়েছে। এখন এর প্রভাবে সংক্রমণ বেড়ে গেলে আবারও কঠোর লকডাউন এমনকি প্রয়োজনে কারফিউ দেয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না বলেও তিনি মনে করেন।
এখন করোনার ঝুঁকি প্রতিদিনই বাড়ছে। এই অবস্থায় লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। এখন সরকারের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত এটা। তারা হয়তো অর্থনৈতিক দিকটা বেশি বিবেচনা করেই লকডাউন শিথিল করেছে। তবে শর্ত দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ভয় হলো যদি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যায়, তাহলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বো আর কি।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আরও বলেছেন, আমাদের কোন ঝুঁকি নেয়ার আগে আরেকবার চিন্তাভাবনা করা উচিত। এমনকী আমি একথাও বলছি, যেহেতু লকডাউন শিথিল করা হলো, এবং তাতে যদি দেখা যায় যে আবার সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। তাহলে আবার খুব শক্তভাবে লকডাউন দিতে হবে। প্রয়োজনে যেন কারফিউ দেয়া হয়, এই অবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে। তবে বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি খারাপ হলে আবারও লকডাউন কঠোর করা হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
সূত্র–বিবিসি।